Dialogues_On_Public_Health1
"প্যানডেমিক" এর সময়ে, রাষ্ট্রের নানা রকম নিদান এ জনমানুষ নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষের ওপর এই যে আঘাত, সেই সময়ে মানুষের হয়ে লড়াই আন্দোলন যাদের করার কথা সেই সব শক্তিকে, মানুষের পাশে দেখা যায় নি। রাষ্ট্র এবং সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে লড়ার বদলে তাদের অনেককেই দেখা গেছে যে রাষ্ট্রের দেওয়া নিদান মানুষের কাছে প্রচার করতে। এই সময়ে এক গ্রামীণ ডাক্তারদের সঙ্গঠন গ্রামীণ জনমানুষের পাশে দাড়িয়েছেন। কোন শক্তিতে বলীয়ান হয়ে, কোন তত্ত্বের ভিত্তিতে তারা এই কাজ করতে পারলেন, সেই আলোচনা উঠে এসেছে ডাঃ স্বপন কুমার জানার সঙ্গে আমাদের কথোপকথনে। ডাঃ স্বপন কুমার জানা, যিনি একাধারে এই গ্রামীণ ডাক্তারদের সঙ্গঠনের প্রতিষ্ঠাতা এবং উপদেষ্টা, আর অন্যদিকে, সমাজে চালু সরকারী এবং অসরকারী অপচিকিৎসার শুধু সরব সমালোচকই নন, তার তাত্ত্বিক সমালোচক, তাদের প্রতিষ্ঠিত সোশ্যাল ফার্মাকোলজির সংস্থার মাধ্যমে। ওষুধ বিজ্ঞানের সঙ্গে অর্থনীতি, সংস্কৃতি, রাজনীতির যোগও উঠে এলো ডাঃ জানার সঙ্গে আমাদের কথোপকথনে।
লকডাউন বিরোধিতায় পথে নামলো বিভিন্ন ছাত্র ও গণ সংগঠন। বিনা শর্তে স্কুল কলেজ চালু করা ও অনতিবিলম্বে অনলাইন পঠন পাঠন বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে। লোকাল ট্রেনসহ সমস্ত গণপরিবহন স্বাভাবিক করার দাবিও উঠেছে। ছাত্র ও বিভিন্ন জন উদ্যোগের পক্ষ থেকে তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে লকডাউনের নামে সাধারণ মানুষের ওপর নামিয়ে আনা জুলুমবাজির।
দেশের স্বাধীনতার পর থেকে শিক্ষা ব্যাবস্থা কি মানুষ তৈরী করার ওপর জোর দিয়েছে, না তার উদ্দেশ্য ছিল পুজির প্রয়োজন অনুযায়ী দক্ষ শ্রমিক তৈরী করা? আজকের যুগের দুই অভিজ্ঞ শিক্ষিকা, শ্রীমতী রীনা দাস বসু এবং শ্রীমতী সুনন্দিতা দেবনাথ এর সঙ্গে কথোপকথনের মধ্যে উঠে এসেছে এই প্রশ্ন। অভিজ্ঞতার মধ্যে উঠে এসেছে শিক্ষা ব্যবস্থার হাজারো সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তার মধ্যের দুই ধারার বৈশিষ্ট্য। এক ধারায়, এই ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে জনমানুষ এর জীবন যাপনের ভার কিছুটা লাঘব করার চেষ্টা, আর দ্বিতীয় ধারায় রাষ্ট্রের দ্বায়িত্বে জনমানুষের জন্য যে শিক্ষা ব্যবস্থা, তাকে নিয়ত দুর্বল করার প্রচেষ্টা। কোভিড কালের গত দেড় বছরে, জনমানুষের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা যে আরো ভেঙে পড়েছে, তাকে দুর্বল করে দেওয়ার প্রক্রিয়া যে অনেক বেশী গতি পেয়েছে, আলোচনায় বেরিয়ে এলো সেই অভিজ্ঞতাও।
NRC - CAA বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে একটি আলোচনা
আমলাতন্ত্রের ফাঁস থেকে মুক্তির জন্য উদারীকরণের পক্ষে ওকালতি করা হয়। তারপরে ক্রমে উদারীকরণের হাত ধরেই ফিরে আসে আমলাতন্ত্র। বৃত্ত সম্পূর্ণ হয় না শুধু, আরও ছোট হয়, ফাঁস আরও চেপে বসে। এই আমলাতন্ত্রের সরকারি দায়িত্বের ভানটুকুও থাকে না। সরাসরি মুনাফাকেই একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সরকারি হাসপাতালে, স্বাস্থ্যসাথীর সূত্রে স্বাস্থ্যবীমাকে বাধ্যতামূলক করার বিরোধিতা করছে, রাজ্যের অধিকাংশ চিকিৎসক সংগঠন। এবিষয়ে আলোচনা করবেন, ডাক্তার পুণ্যব্রত গুণ (Punyabrata Goon) । তিনি শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের অন্যতম উপদেষ্টা, ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের আহ্বায়ক এবং জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস-এর যুগ্ম আহ্বায়ক।
২৪ নভেম্বর, ২০২১, বুধবার, সন্ধ্যা সাতটা, কথোপকথন kathopokathan ফেসবুক পেজে লাইভ সম্প্রচারিত হয়।
গত এক বছরের মতো সময় ধরে বর্ডার এর ধারনা পরিবর্তিত হয়ে গেছে। দেশের সীমানা বোঝানোর বদলে, বর্ডার বলতে এখন বোঝায় সিঙ্ঘু বর্ডার, টিকরী বর্ডার আর গাজীপুর বর্ডার। মানে দিল্লির তিনটে বর্ডার, যে বর্ডার এর এপাশে সারা দেশ, আর ওপারে কাটা পেরেক এর দ্বারা নিজেদের সংকীর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাগলামিতে রত আমাদের রাষ্ট্রের হেড অফিস। সেই বর্ডার তিনটির একটিতে, টিকরী বর্ডারে, নিরস্ত্র অথচ দৃঢ় অবস্থানে লড়াইরত কৃষকদের ধারাবাহিক ভাবে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে বি কে ইউ (একতা – উগ্রাহান) এর সংগঠন । তাদের নেতৃত্বের পরিচিত মুখ হরপ্রীত সিং উগ্রাহান এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে উঠে এল কিভাবে কোভিড প্রোটোকলকে অপব্যাবহার করে সরকার মানুষের ওপর জোরজুলুম করেছে, এবং কৃষক আন্দোলনের কি সেই শক্তি যার দ্বারা সরকারের এই জোরজুলুমের মুখেও তাদের আন্দোলন টিকে থাকতে পেরেছে।
ভারত সরকার যে এই তিন কৃষি আইন ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন, সে সম্পর্কে ওনার মতামত হিসেবে বলেছেন যে এটা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা মাত্র, কাগজে কলমে এখনো কিছুই হয়নি, এবং অন্যান্য দাবীগুলো সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী কিছুই উল্লেখ করেননি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে সংযুক্ত কিষান মোর্চা, কৃষক সংগঠনগুলোর মহাজোট, আজ ২১শে নভেম্বর এক বিবৃতি দিয়ে ভারতের কৃষক ও শ্রমিকদের অভিনন্দন জানিয়েও বলেছে যে তাদের সমস্ত ঘোষিত কর্মসূচী বহাল থাকবে, এবং না মেনে নেওয়া দাবীগুলো নিয়ে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে এক খোলা চিঠি দেবেন।
'নাগরিকের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব অস্বীকার করার পরিস্থিতিটা তৈরি হয়েছে, মানুষের প্রতিরোধ আন্দোলনের অনুপস্থিতির সুযোগে। এটা হঠাৎ করে আজকে, বা কোভিড-এর কারণে শুরু হয়েছে এরকম নয়। শুরুটা অনেক আগেই হয়েছিল। শিক্ষাপদ্ধতি এবং বিষয়বস্তুর এই পরিবর্তনটা হওয়ারই ছিল। কোভিড পরিস্থিতি একটা যুক্তিগ্রাহ্যতা দিয়েছে মাত্র। কোভিড অতিমারি সম্পর্কে যে প্রায় একটা সর্বজনগ্রাহ্য ভয় তৈরি করা গেছে, সেটার কারণে, জনগণের একটা বড় অংশ, যাঁরা শিক্ষার অর্জিত অধিকার হরণের প্রতিবাদ করাতে পারতেন, তাঁদেরকেও ভাবানো গেছে এছাড়া আর কিছু করার ছিল না।ফলস্বরূপ শাসকেরা প্রায় নিরুপদ্রবে, নির্বিঘ্নে শিক্ষাক্ষেত্রের এই পরিবর্তনটা ঘটিয়ে ফেলার সুযোগ পেয়েছেন।'
এমনটাই ভাবছেন, অধ্যাপক শুভেন্দু দাশগুপ্ত।
দীর্ঘ অপেক্ষার পরে, ১৬ নভেম্বর, ২০২১, মঙ্গলবার থেকে আবার স্কুলের পঠন-পাঠন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। এর মধ্যে লকডাউনের কারণে শিক্ষার সুযোগ হারিয়ে, অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী সস্তা শ্রমের বাজারে জড়ো হয়েছেন। শুধুমাত্র দুবেলা খাওয়ার সংস্থান নিশ্চিত করতে অসংখ্য নাবালিকার বিয়ে হয়েছে। নারী পাচার বেড়েছে। ভ্যাকসিন-কে অলিখিত ভাবে লকডাউনের অচলাবস্থা থেকে পরিত্রাণের শর্ত করে তোলা হয়েছে।
টিকার দুটি ডোজ, তারপরে ষান্মাসিক বুস্টার ডোজ, ভবিষ্যতে এটা সাপ্তাহিক বা দৈনিক হতে পারে কিনা সেসম্পর্কে কোন পরিষ্কার ধারণা কোথাও আছে বলে মনে হচ্ছে না। এরপরে নাকে-মুখে কাপড় এঁটে দুই গজের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলার বাধ্যবাধকতায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেনা বন্দোবস্তে স্থান সংকুলান কি আদৌ সম্ভব? একঘরে চল্লিশ জনের একটা সেকশন - এটা যদি আর সম্ভব না হয়, তাহলে স্কুল বাড়িগুলোতে স্থানসংকুলান বাড়াতে হবে, হয় সময় বাড়িয়ে, না হয় জায়গা বাড়িয়ে। সেটা যদি সম্ভবও হয়, তাহলে কয়েকগুণ বেশি শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। এই সম্ভাবনাগুলো সম্পর্কে সরকার বা কোন প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ যত্ন নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন, এরকম কোন ভরসা করার কোন কারণ এখনও কেউ পাচ্ছেন কিনা, জানা নেই। এর মধ্যেই শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং শিক্ষার বিষয়বস্তু সংক্রান্ত যে বোঝাপড়াটা চালু ছিল, সেটার প্রায় খোল নলচে পর্যন্ত পাল্টে ফেলার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কথোপকথন, ডায়ালগস অন পাবলিক হেল্থ-এর এই পর্বে আমরা কথা বলেছি, অধ্যাপক শুভেন্দু দাশগুপ্ত-র সঙ্গে। দীর্ঘদিন শিক্ষা ও শিক্ষক আন্দোলনে যুক্ত থাকার সঙ্গে অধ্যাপক দাশগুপ্ত গবেষণা করেছেন শিক্ষাদান পদ্ধতি ও শিক্ষার বিষয়বস্ত নিয়ে।
অধ্যাপক দাশগুপ্তর মতে, 'শিক্ষাক্ষেত্রের এই পরিবর্তন হওয়ারই ছিল। কোভিড পরিস্থিতি, এই পরিবর্তন-কে যৌক্তিকতা দিতে সাহায্য করেছে মাত্র। কোভিড পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশ্বাস তৈরি করাটা যত সফল হয়েছে, তত এই যুক্তির গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।'
Created 2 years, 5 months ago.
7 videos
Category None